Wednesday, March 9, 2016
উৎসর্গ
…….
ইতিহাস্পদেষু
প্রস্তাবনা
†
বৌদ্ধ
দর্শন পড়াতে গিয়ে ক্লাসে রবীন্দ্রনাথের গান গেয়ে ফেলেছিলেন
লক্ষ্মীকান্ত স্যর। আত্মদীপ ভব। আত্মশরণ ভব। অনোন্য শরণ ভব। এটা বোঝাতে গিয়েই
গাইলেন, আমার এ ধূপ না পোড়ালে গন্ধ কিছুই নাহি ঢালে, আমার এ দীপ না জ্বালালে দেয়
না কিছুই আলো। অঘ্রাণের অনুভূতিমালা-র শেষ লাইনে বিনয় লিখলেন, গাছ মরে গেলে যা
প’ড়ে থাকে, তা গাছ। পাখি মরে গেলে যা প’ড়ে থাকে, তা-ও পাখি। মৃত ব’লে অন্য কিছু
নয়। একইভাবে আমাদের মন মরে গেলে যা থাকে, তা-ও মন। মৃত্যুর নিয়মে। চীনের এইসময়ের
কবি ইয়ান জুন লিখলো, ‘একটা খালি ফাঁকা বাসও একটা বাস’। সময়ের ভেতর
বোধ’য় একটা অলিগলি পথ আছে কোনও। যেখান দিয়ে সুড়ুৎ ক’রে কেউ কেউ দেশ কাল
ভাষা টপকে যাতায়াত ক’রে আসেন। রবীন্দ্রনাথ দেখা ক’রে আসেন বুদ্ধের সাথে। বিনয়ের সাথে মোলাকাত হয়ে যায় ইয়ান জুনের।
না পুড়িও মোর অঙ্গ না ভাসাও জলে।
মরিলে রাখিও বাঁধি তমালের ডালে।।
কবহুঁ সো পিয়া যদি আসে বৃন্দাবনে।
পরাণ পায়ব হাম পিয়া পরশনে।।
—বিদ্যাপতি
[প্রথম
পর্ব]
এটা আমার হাত, আমি এ-কে নড়াতে পারি
কি সাঙ্ঘাতিক এই কথাটা। এটা আমার হাত।
আমি এ-কে নড়াতে পারি। ইঙ্গমার বার্গম্যান তাঁর ‘দ্য সেভেন্থ সীল’ চলচ্চিত্রে
রেখেছিলেন এই কথাটি। দিস ইজ মাই হ্যাণ্ড, আই ক্যান মুভ ইট। কে এই ‘আমি’? আমি-র
হাতেই রয়েছে এই হাতের চাবি। এবং যতক্ষণ তা রয়েছে, আমি বেঁচে আছে।
[S Y N O N Y M S F O R
M I N D]
As for the apparent and distinct
[phenomenon] which is called ‘mind’:
In terms of
existence, it has no [inherent] existence whatsoever.
In terms of origination, it is the
source of the diverse joys and sorrows of cyclic existence and nirvãna.
In terms of [philosophical] opinion,
it is subject to opinions in accordance with the eleven vehicles.
In terms of
designation, it has an inconceivable number of distinct names:
Some call it
‘the nature of mind’, the ‘nature of mind itself’.
Some
eternalists give it the name ‘self’.
Pious
attendants call it ‘selflessness of the individual’.
Cittamatrins
call it ‘mind’.
Some call it
the ‘Perfection of Discriminative Awareness’.
Some call it
the ‘Nucleus of the Sugata’.
Some call it the ‘Great Seal’.
Some call it
the ‘Unique Seminal Point’.
Some call it
the ‘Expanse of Reality’.
Some call it
the ‘Ground-of-all’.
And some call
it ‘ordinary [un-fabricated consciousness]’.
The Tibetan book of the dead, The Introduction to
Awareness: Natural Liberation through Naked Perception, p. 41
কী এই বেঁচে থাকা? কাকে বলে বাস্তব? হোয়াট ইজ রিয়েলিটি?
একটা সুঁচকে আই লেভেলে ভার্টিক্যাল পজিশনে রেখে দেখলে তা দণ্ডাকার। বার্ডস্ আই থেকে টপ অ্যাঙ্গেলে দেখলে তা একটি বিন্দু। কোন্টি সত্য নয়? এর মধ্যে কোন্টি বাস্তব নয়?
একবার, মাঝ-রাতে, ব্যাঙ্গালোর সিটি-গৌহাটি এক্সপ্রেস ঢুকছে
কোচবিহার স্টেশনে। বঙ্কিমচন্দ্র ঘুম। মাথার পাশে ভাঁজ ক’রে
রাখা নবারুণের শেষ সাক্ষাৎকার। সবাই ঘুমিয়ে পড়ার পর, কামরার অল্প আলোতে পড়া শেষ
ক’রে কখন ঘুমিয়ে পড়েছেন বঙ্কিম। ট্রেন যখন ছেড়ে যাচ্ছে স্টেশন, কি করে যেন ভেঙে
গেল ঘুম। এসি-র কাচে মুখ ঠেকিয়ে বাইরের আলোগুলো দেখে বুঝলেন, স্টেশন পেরিয়ে
যাচ্ছে। পরের স্টেশন আলিপুরদুয়ার। সাদাত হাসান মান্টো থাকেন এখানে। মান্টো কি
তাহলে আজ বঙ্কিমকে এই মাঝ-রাতে নিজের বাড়িতেই নিয়ে যাবেন? রাত আড়াইটেয় বঙ্কিম যখন
আলিপুরে নেমেছেন, কে বলবে ওটা আলিপুরদুয়ার? আকাশ-মাটি ফুঁড়ে বৃষ্টি যেদিক থেকে
পারছে সব যেন এই স্টেশনেই নেমে আসছে। একটা
হিল-স্টেশন মনে হচ্ছে তখন আলিপুরকে। স্টেশনের সব আলো নিভে আছে। শুধু ডিজিটাল
বোর্ডের লাল ঝাপসা আলোগুলো জ্বলছে। তার আঁকাবাঁকা ছায়া পড়েছে প্ল্যাটফর্মে।
স্টেশনের সারা মেঝে জুড়ে গণেশ পাইনের জলরঙ। অবিন্যস্ত কয়েকজন নেপালি পুরুষ-মহিলা
এদিকে-ওদিকে। ট্রেনটা কি সত্যিই আলিপুরে এসেছে? না-কি শিলঙের বা দার্জিলিঙের কোনও
স্টেশনে ফেলে গেছে বঙ্কিমকে। নবারুণ, না-কি
মান্টো, কে নিয়ে এলো বঙ্কিমকে এখানে? যদিও বঙ্কিমের কোনও তাড়া নেই। এই পাগল, এই
উন্মাদিনী বৃষ্টিকে ফেলে সে কোথায়ই বা যাবে। একটা অসময়ের ঘুমের কাছে ঋণী হয়ে রইল
তাঁর জীবন। ফেরার ট্রেন কখনও সখনও দেরি ক’রে আসাই ভালো। রিয়েলিটির তাস উলটে দেওয়া
এই বৃষ্টির মাঝ-রাত এটা বুঝবে। মানুষ বুঝবে না। জলই বোঝে জলের অধিকার। এক-একজন স্রষ্টা তো এক এক অভিমুখে যাত্রা করেন। কেউ
টুকরো ভাঙা আয়নার অস্তিত্বের ওপর দাঁড়িয়ে, সেখান থেকেই শুরু করেন, যা কিছু পেছনের
সেই সবকিছুকেই পেছনে ফেলে। কেউ কেউ ইতিহাস থেকে স্বীকরণ ক’রে, উত্তরাধিকার সূত্রে
প্রাপ্ত যা কিছু আজ তার কাছে বেঁচে আছে, তার সম্পদ গোলায় তোলেন। তাকে জারিত করেন
নিজের সময় পরিসর অভিজ্ঞতা মেধায়। নিজের যাত্রাটি বজায় রাখেন। এই দ্বিতীয় শ্রেণির
যাত্রাটি দ্বিমুখী। পেছনের দিকের যাত্রাটি অনেকাংশেই নিরীক্ষামূলক। সামনেরটা, পরীক্ষার। বঙ্কিমচন্দ্র কোন্ পথে হাঁটবেন? এটা আমার হাত। আমি এ-কে
নড়াতে পারি। কিন্তু কোন্ দিকে? এবং কখন ও কীভাবে? পতনশীল বৃষ্টির ধারা ও নিজের
চোখ, এ’ দুয়ের মাঝখানে বঙ্কিম নিজের ডানহাত রাখেন। হাতের রেখা চামড়া মাংস হাড় ভেদ
ক’রে বৃষ্টি দেখা যায় কিনা। আকাশ থেকে মাটি অবধি উল্লম্বভাবে শাদা সুতো বেঁধে
দেওয়া হয়েছে। পতনমুখী বৃষ্টির হাহারবের কাছে জ্ঞানকর্ণ নত করেন বঙ্কিম। দ্যাখেন,
রেললাইন ধ’রে মোটাসোটা এক লোক হেঁটে চলেছে। বৃষ্টির ভেতর। গাম্বুট পরা। গায়ে
ছাইরঙা রেইনকোট। বাঁ কাধে বাজপাখি নিয়ে হেঁটে যাচ্ছে লোকটা। ঝাপসা কুয়াশা আর
বৃষ্টির শাদা ধোঁয়ার মধ্যেও বঙ্কিম তাঁকে
চিনতে পারেন। হাঁক দেন। ‘ক-র্ণে-ল। ক-র্ণে-ল’। মুখ তুলে তাকায় লোকটি।
বঙ্কিমকে চিনতে পেরে গালভর্তি চওড়া হাসিতে সে এগিয়ে আসে। তাঁর নাম গ্যাব্রিয়েল
গার্সিয়া মার্কেজ। বৃষ্টিভেজা উত্তরবাঙলার প্রান্তিকতম এক রেলস্টেশনে, পৃথিবীর দুই
মেরুর দু’জন স্রষ্টাকে আমরা এই মুহূর্তে আলিঙ্গন
করতে দেখব। মার্কেজ, তাঁর বাঁ কাঁধে বসা বাজপাখিটির পালকে হাত বোলাতে বোলাতে
বলেন,— ‘খুব মন খারাপ করছিল জানেন। তাই বৃষ্টি ভিজতে বেরিয়ে পড়লাম। তবে, আজ রাতের
এই মন খারাপের কাছে আমি চিরকাল ঋণী হয়ে থাকব। আপনার সাথে নইলে তো দেখাই হ’ত
না।
—‘আমিও কি ভাগ্যে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম ট্রেনে। আপনি মন খারাপের
কাছে ঋণী থাকুন। আমি ঋণী রইলাম আমার তন্দ্রার কাছে।’
দু-জনে হাঁটতে হাঁটতে স্টেশনের শেষ মাথায় একটা আধখোলা
চা-দোকানের সামনে এসে থামেন।
—‘কী নাম রেখেছেন আপনার এই পোষ্যটির?’
মার্কেজ বাজপাখিটির ধারালো ঠোঁটে আঙুল ছুঁইয়ে বললেন,—
—‘পোষ্য নয় তো! ও আমার সন্তান। ওর নাম চে।’
*
* *
পাঠক, এর বেশি এই কথোপকথনের ভেতর ঢোকা আমাদের পক্ষে কি উচিত
হবে? এ’ তো পাপ। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এবং গ্যাব্রিয়েল মার্কেজ যখন মুখোমুখি
দাঁড়িয়ে কথা বলছেন, যেখানে দাঁড়িয়ে বলছেন, সেই স্থান অচিরেই পূজার বেদী। তা
নিকুম্ভিলা যজ্ঞাগার। কাপুরুষ লক্ষ্মণ সেখানে বিনা অনুমতিতে প্রবেশ করতে পারে। তা
ব’লে আমরাও? যুগ্ম নক্ষত্রের ওই তেজস্ক্রিয়তা আশি জি এস এম-এর এই বুক প্রিন্ট কাগজ
সইতে পারবে না। এই ঐতিহাসিক কথোপকথনের যেটুকু আমরা হাওয়া বাতাস ধূলিকণার মাধ্যমে
জানতে পারি, তা হ’ল, মার্কেজ জানান, তিনি আলিপুরদুয়ারে মান্টোর বাড়িতেই উঠেছেন।
বঙ্কিম বলেন, তিনি কোচবিহার যাচ্ছেন মধুসূদনের একটি কাজে। ১৮৬০ সালে মধুসূদন একবার
একটি চিঠি লিখেছিলেন কোচবিহারের মহারাজা নরেন্দ্রনারায়ণকে। চাকরির আবেদন আর কি।
এতো বছর পর মাইকেলের মনে হচ্ছে, সে চিঠিতে সাহিত্যগুণ হয়তো বা কিছু ছিল। অতএব ওটা
এবার ফেরৎ চাই। সে চিঠি আনতেই এতোদূর আসা। বঙ্কিম কোচবিহার যাচ্ছেন শুনে মার্কেজ
তাঁকে বলেন, ওখানে গিয়ে যেন বঙ্কিম অবশ্যই অরুণেশের সাথে একবার দেখা করেন এবং ওঁর
সাথে একটা গোটা চব্বিশ ঘন্টা যেন তিনি অতিবাহিত ক’রে আসেন।
(চলবে)
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
ওহহহহহহহ্ অর্জুন
ReplyDeleteFataisen Boss.
ReplyDeleteFataisen Boss.
ReplyDeleteতারপর
ReplyDelete