Friday, March 11, 2016
পোড়া শহর ২
কখনোসখনো ভিক্টোরিয়ার মাথার ওপরে উঁকি দেয় মার্বেলের চাঁদ
তখন ওই চেনা পরীটার খোলা ময়দানের জন্য মনকেমন করে
কখনো হিমেল রাতে মিসেস ব্রিগেনজার একটু একটু শীত করলে
ঝাঁকড়ামতন একটা গাছ ওনার কবরের ওপর পাতা ঝরিয়ে ওম দেয়
কখনো মনখারাপি বোঝাই একটা জীর্ণ জাহাজ দীর্ঘশ্বাসের ভোঁ ছেড়ে
শুক্লাতিথির এক ফর্সা রাতে বিষাদের বন্দর ছেড়ে যায় ধীরে ধীরে
কড়া কফির গন্ধ বারিস্তার কাঁচ ঠেলে পথে নেমে পড়ে কোনো সন্ধ্যায়
সেরাতে পথ ভুল করে আঁধারের গলিতে ঢুকে পড়া অচেনা যুবকটিকে
ফুটপাথের কোণে গুটিসুটি বসে নিষিদ্ধ নেশা করা মলিন মুসলিম প্রৌঢ়
লালচোখে চেয়ে শান্তগলায় বলে, ‘বাবু, রাত অনেক হল। এবার বাড়ি যাও।’
অপ্রাকৃত কোনো দিনে দামাল কিশোর খাঁচা খুলে ভাসিয়ে দেয় পোষা প্রিয়
চন্দনা
সেদিন দুপুরে ব্যস্ত পুলিশ ট্র্যাফিক ফেলে অন্ধকে রাস্তা পার করায়
ধরে ধরে
অষ্টমীর ক্লান্ত দ্বিপ্রহরে কখনো দুর্গামণ্ডপে ফিরে আসে স্থানীয়
একরাশ শিউলি
কখনো পোড়া শহরের আকাশে পায়রা ওড়ে দীপাবলির বাজির মতো করে
গভীর রাতে ঘরে ফেরার পথে কোনোদিন একটানা করুণসুরে কেঁদে যাওয়া
কুকুরছানা পরিচিত যুবককে দেখে আহ্লাদে কুঁইকুঁই লেজ নাড়ে কান্না
ভুলে
তখন বুঝি, তিনশো বছরের পুরনো অভিশাপের আজ বুঝি মুক্তি হল
তিলোত্তমার।
পোড়া শহর ৩
আমার মাঝে মাঝে ভয় করে, হয়তো আমি একা একদিন
মরে থাকলাম আমার নিঃসঙ্গ ফ্ল্যাটে, কেউ জানলোও না
শুধু টমি, আমার প্রিয় টমি, আমার বরফঠাণ্ডা হাতটা বারবার
চেটে দিল পরম মমতায়, রোজ সকালের অভ্যেসবশে
টমি, এ ঘুম আর ভাঙবে না রে, আহ্ নোংরায় মুখ দিস না
বদ রোগ হয়ে যাবে, তোর মনিব যে এখন জীবাণুর আখড়া
অন্যদিনগুলোর চেয়ে এই দিনটা কতো আলাদা, টমিও তা বুঝছে
মিলের মধ্যে মাথার কাছে রাখা টেলিফোনটা আজো নিঃস্পন্দ
হয়তো ধীরে ধীরে একসময় বাদামীরঙা একদলা মাটি হয়ে যাব
একদিন হয়তো কোনও সবুজ শিশুবট মাথাচাড়া দেবে আমার
জৈব ধ্বংসস্তূপের ভেতর থেকে, সে আমার প্রথম আত্মজ
অনেক বছর পরে, আমার ফার্নিশড ফ্ল্যাটের ভাঙা শার্সি দিয়ে
কোনও এক ছিটঘুঘু ঢুকে জমা করবে প্রথম খড়কুটোর টুকরো
কালের সহায়তায় আমার ঘরটা একটা ছোটখাটো অরণ্য বনে যাবে
হরেকরকম পাখি বাসায় ফিরবে সন্ধ্যেবেলায়, তক্ষকের ডাক শুনে
আরও অনেককাল বাদে, হয়তো ভূমিকম্পে ধ্বসে পড়বে বাড়ির ছাদ
আমি বহুযুগ পরে দেখবো সূর্যের ছটা শীতঘুম ভেঙে, চনমনে লাগবে
রাতে আধশোয়া দেখবো চাঁদের মুখ হতে মেঘের ঘোমটার সরে যাওয়া
এইভাবে এই হৃদয়হীনা পোড়া শহরের ভিত শক্ত করতে প্রয়োজনীয়
নরবলির অসম্পূর্ণ তালিকায় যোগ হয়ে যাবে এক নতুন মৃতদেহ।
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
0 comments:
Post a Comment