(রমিত দে)
Friday, March 11, 2016
........রবীন্দু বিশ্বাস.....
(কাব্যগ্রন্থ- ‘সাংসারিক’ , ‘সূর্যের জন্মছক’, ‘সাইবার গায়িত্রী’, ‘পিট্টুখেলা’, ‘বিলগ্নীকরণ’, ‘শব্দের বাজার’ , ‘গাছেদের গ্রাম,সিঁধকাঠি ও তোলপাড়, ‘ধুন্ধুমার’ )
“নেই আর আছে নিয়ে চলাফেরা করে গল্প”...রবীন্দু বিশ্বাসের কবিতা বলতে বললে একে বলব তার সরল উত্তর। পোস্টমর্ডান
ফ্র্যাটারনিটির কবি রবীন্দু বিশ্বাস।আধুনিক বা আধুনিকোত্তর প্রকরণের কচকচানিতে না
গিয়েও বলা যায় রবীন্দু বিশ্বাসের কবিতা জুড়ে আধুনিকবাদের সেই নিঃসংগ মানুষ নেই বরং
আধুনিকোত্তর সেই নাছোড় মানুষটি আছে যে কিনা চিরকালী শূন্যে দাঁড়িয়েও সম্ভাবনার
অভিধান ঘাঁটছে। বাতি জ্বেলে ঘুমোচ্ছে, ঘুমের ভেতর কথা টথা
বলছে। তাঁর কবিতায় জীবন একধরনের ইনএস্কেপেবল ম্যাট্রিক্স, যার
প্রতিটি বিন্দুতে প্রতিটি স্তরে কিছু না কিছু আবিষ্কার আছে; কিন্তু
এই আবিষ্কার এই অন্বেষন কেবলই কি বোধগম্যতার ? ভাষার ?
শব্দের ? নাকি তার ভেতরে অনুল্লেখ কিছু
ভাষাহীনতাও আছে? নাহলে রবীন্দু কেন বলবেন-“ শব্দহীন মন্ডলে কিছু একটা হবে”! অথচ এই শব্দহীনতা
সময় ও পরিসরের দ্বিরালাপ থেকেই তার শরীর পাচ্ছে, প্রতিবেশী
আর পায়চারীর দেহাতি অন্ধকার থেকেই ভেসে উঠছে ভাষাহীনতার এই আদিমতম পর্যায়।আসলে
সভ্যতার চড়া দামের ভেতরই কিছুটা স্বনির্বাসনের ফাটকা খেলেছিলেন রবীন্দু। আমরা
জানতেও পারছিলাম না কখন কিভাবে কোথায় মানুষ যেখানে অনেকটা এগিয়ে গেছে সেখানেই একজন
কবি ক্রমাগত সিটিয়ে যাচ্ছে গাছের পাতায়, আগুনের হলকায়...আসলে
যে বাস্তবতা থেকে কবিতা শুরু হল সেই বাস্তবতা কিন্তু একটি যাত্রার বর্ণনায় চিহ্নিত
আবার সেই যাত্রা আসলে একটি অসীম ধারনার সঙ্গে সম্পৃক্ত। এখন এই অসীমকে ছুঁতে গেলে
আমাদের ছুঁতে হবে আদির আয়তনকে ,তারমানে সেই নগ্ন নিরেট
সময়মুক্তির সংজ্ঞাটিকে। কিন্তু রবীন্দু তো ভাষাকোলাহলের এক সংকটে দাড়িয়ে সেই
অনির্ভর প্রথম আর্কিটাইপটাকে পেতে চাইলেন ! পেলেন কি?
না , পেলেন না ...
তাহলে কি পেলেন?
সিগন্যালের আলোগুলো লাল হয়ে কতটা করুণ হয়ে আছে !
গাছের পাতায় পাখিরা একা হয়ে আছে !
কোনো ঝিম স্টেশনে পুরি সবজি ঠেলাটা পড়ে রয়েছে এক কোণে !
অন্ধকার ফাটিয়ে ওয়াগন ভাঙিয়েরা টর্চের আলোয় রাতভোর
খুঁজে ফিরছে স্বপ্নদের !
এই তার পাওয়া?...আসলে কবিতায় দুঃখ
লিখতে না পেরে তিনি প্রতীকের মোড়কে দুঃখের কিছু সম্প্রসারিত অভিক্ষেপ আঁকলেন, কিছু থাকা না থাকার শেকড় খুঁড়লেন, অস্তিত্ব নিছক
অবভাস জেনেও তার খোলের ভেতর আলো অন্ধকার মাখালেন। এখন এই বিভিন্নতার প্রলেপ থেকে
চুঁইয়ে নামলেই আমরা পেয়ে যাব সেই বোধের বুনোট যাকে আর দুঃখ নাম দেওয়া যাবে না ,
সে এখন একটি বিবর্তিত মনতাজ, সে এখন সত্তা এবং
সম্ভাবনার মাঝে পূর্ণতার দ্বিধা দ্বন্ধ নিয়ে সূত্রকারকেই গিলে খাবে আর কবি
রবীন্দুর আঁতুরঘরে জন্ম নেবে পাঠক আমির পথ ও পথান্তর । এভাবেই রবীন্দু বিশ্বাসের
প্রায় প্রতিটি কবিতাতেই আমরা পেয়ে যাই- “ জীবনের মধ্যে মানুষ,
আর মানুষের মধ্যে সময়, আর সময়ের মধ্যে জীবন”।
একটা সময় “কবিতা পাক্ষিক’-এর প্রায় প্রতিটি সংখ্যাতেই রবীন্দু বিশ্বাসের কবিতা চোখে পড়ত, পাক্ষিকের কবি রবীন্দু বিশ্বাস যিনি পণ্যায়নের সুবিধাবাদী সাহিত্যকর্মকে
প্রত্যাখান করে অলক্ষ্যে চিন্তা আর জিজ্ঞাসার একধরনের দ্রোহের সামিল ছিলেন প্রায়
সারাটা জীবন। মাঝে মাঝে মনে হয় প্রতিটি কবিই তার থমকে যাওয়া কিছুটা সময় আমাদের
উপহার দেন আর সেই সময়ের গর্ভপাত আমরা করে ফেলি খুব তাড়াতাড়ি ফোঁপরা নান্দনিকতার
দৌড়ে সামিল হয়ে । আমার দৃঢ বিশ্বাস আজ হয়ত কেউই রবীন্দু বিশ্বাসের কবিতা পড়েন না,
মূর্হুমূর্হু পালটে যাওয়া এই ডিজিটাল ব্রহ্মান্ড চ্যানেলে আজ হয়ত
কারুরই নিজের কবিতার বাইরে সময় নেই বিচ্যুতিকে নিয়ম বলে মেনে নেওয়ার। আবার মাঝে
মাঝে মনে হয় হয়ত আজও রবীন্দু বিশ্বাসদের মত কবিরা আছেন ভীষন দৌড়ে মার খেয়ে মড়ার মত
কোথাও পড়ে; বৃহৎ পুঁজির কাছে সমর্পিত না হতে চেয়ে যারা আজও
হয়ত জীবন,শুধুমাত্র জীবনের উদ্দেশ্যে লিখে রাখছেন -“এভাবে কি ছাঁদা বাঁধা যায়? গেলেও তা কতদিন?”...
(রমিত দে)
(রমিত দে)
সাপেরা ঘুমোচ্ছে
সাপেরা ঘুমোচ্ছে, থাক ! বেড়ালের লোমে
লোমে ঘন হচ্ছে শীত
চুপচাপ প্যাঁচাটির মা প্যাঁচাটিকে সঙ্গে নিয়ে ডালে বসে
আছে
রাত্তিরে শেখাবে ওকে কীভাবে ইঁদুর কটা ধরা যেতে পারে
ওদিকে পাহাড়ে রোজ বরফের কুচি উড়ছে জমে যাচ্ছে সাদা
বাড়ছে চূড়ার মাথা আকাশের নীচে গিয়ে ঠেলা মারছে কেন
চূড়া না চূড়ার স্পর্ধা আকাশের নীল গায়ে জড়ো করছে মেঘ
মেঘ না বরফে কে সে তপস্যা করতে চাইছে জল হবে বলে
চিনাকুড়ি খাদানে
চিনাকুড়ি খাদানে দুর্গাপুজোর মন্ডপ বানাবার জন্য ছমাস
ধরে ব্যস্ত ছিলেন
বাঁকুড়ার শিল্পীরা। তাদের কথায় শব্দ হত না কেবল ইশারায়
মন্ডপের কাপড়ে
কীসব লাগিয়ে সৃষ্টি করেছিলেন পশুপাখি গাছপালা আর
মানুষের ভঙ্গিমা ।
মন্ডপের অল্প দূরে আলোর কারিগর তৈরি করেছেন ডাইনোসর...
তার মুখোমুখি
একটা বাঘ জিভ বের করছে মাঝেমাঝে আর যন্ত্রে আওয়াজ হচ্ছে
হালুম ।
লড়াই হলে কে জিতবে জানতে চাইছিল শিশুরা। কে যেন ওদের
মাঝখানে
বসিয়ে দিলেন একটি প্রজাপতি যার ডানা দুটি খুলছে আর বন্ধ
হচ্ছে এবং
ঝলমল করছে সাতরঙের চোদ্দরকম বাহার। শিশুরা সবাই ওই
প্রজাপতিটিকে উড়িয়ে দেবার জন্য খুঁজে বেড়াচ্ছে শিল্পীকে
।
পৌঁছবার ইচ্ছা
এই গাছে বাজ পড়েছিল। মাথার ওপর। ব্রহ্মদৈত্য বাজটিকে
লুফে
কান্ড বেয়ে গুঁড়ি ফুঁড়ে পাতালভৈরবের থানে
লোকটি তখনও, তখনও দাঁড়িয়ে। কী
করবে?
কথা দিয়েছিলি ডিঙি চড়ে মাছ ধরতে যাবি।
মাছ খায়? এসময় ! ফাতনা কি
বঁড়শিকে দেখে, ঝড়বৃষ্টি পেলে?
নদী আহ্লাদিত হলে মাছ কি টোপের লোভে মৎস্যজীবন নষ্ট করে?
লোকটি মেছুড়ে হলে, মেছুনির ভালোবাসা
পেলে
মাটি কি ডিঙিকে বাধা
দিত?
লোকটি তখন হয়তো কোঁচ সংগে নিত
ডিঙি বেয়ে তোর কাছে পৌঁছতে কি পারত না সেদিন?
শ্মশানে
যেরকম হয় সব জায়গায় । শ্মশানেই মজে গেলি তুই !
কাঠজ্বলার পট পট আওয়াজ...চিতার আগুন...আগুনের ধোঁয়া...
চিতায় জল ঢাললে ছ্যাঁক ছ্যাঁক
শব্দ...পোড়াগন্ধ...ধোঁয়া...
ধোঁয়ার রথে চড়ে সতীলক্ষ্মীদের স্বর্গে যাওয়া...পাপীদের
নড়া ধরে
নরকে পাঠানো...শ্মশানটা কেমন কান্না আগুন জল পোড়াগন্ধ
মিলে
ধোঁয়ার ঘর হয়ে উঠল । ডোমদাদুর তালে মশগুল হয়ে গেলি তুই
!
শিখে নিলি চিতা সাজানো... ফুটো কলসিতে জল ঢালা...চিতা
নেভানো
নাভি খোঁজা
কান্নাকাটি...শাঁখা ভাঙার চিল চিৎকার...সিঁথির দখল
ছড়ানো সিঁদুর...
ফুঁপিয়ে কান্নার কাছে শেয়াল
সেই হাওয়াতেও মস্তি...ধেনোর বোতল...কেঁধোদের সঙ্গে পাখি
ঝলসানো...
আগুনের হলকায় বদলে যায় শরীর...সিটিয়ে যায় গাছের পাতা...
ডোমদাদুর নাতিনাতনিরা, লুঠের মাল
খুঁজে পেয়েছিস ভেবে
ঠ্যাঙারেদাদুদের নামে দিব্যিটিব্যি কেটে
অন্ধকার গলিয়ে ভূত ঢেলে দিল তোর শরীরে
চোরাই ধানে
চোরাই ধানে ভর্তি ছিল গর্ত। গন্ধ মেখে বেরিয়ে এল
শাঁখামুটি।
কী বুঝল গাছের ফোকর; ওড়াউড়ি করছিল টিয়া
ওখান থেকেও নেমে এল আরেকটি
মাটি নিকিয়ে রেখেছিল গাছেদের গ্রাম। হাওয়া বইছিল
কিন্তু কথা বলছিল না কোনো পাতা
বোঁটা আঁকড়ে ঝুলে ছিল জামরুল
পিঁপড়েরা জায়গা ছেড়ে দিল
এর ওর সামনে দাঁড়াল। কিছু কিছু ছোঁয়াছুয়ি হল।
গিঁট বেঁধে জড়িয়ে ধরল দুটো শরীর। ডানা গুটিয়ে বসে রইল
কোঁচবক।
ডুব দিয়ে উঠে আসার সময় সে দেখল, ঝোপের আড়ালে
দাঁড়িয়ে আছে ভিনগাঁয়ের মোড়ল, কাছে এসেই সে
পরনের কাপড়টা ছুড়ে দিল ওদের শরীরে।
ডালপালা ছড়িয়ে দিল গাছ। খসে পড়ল আকাশ।
ভূগর্ভের জলস্তর
মানুষ কি পাখি? যাযাবর? সময় বুঝে উড়ে আসবে সাঁতরাগাছির ঝিলে
পাখি বাঁচাতে কত ঘুড়ি ওড়ানো বন্ধ করতে হবে...কত নজরদারি
হিসেব করতে কটা সমিতি উপসমিতি...কতজন গুনী...কত অনুদান
কোষাগারের দায় মেটাতে কর চাপালেই তো সম্পাদকীয়
মানুষ কি বলদ? জোয়াল কাঁধে মাঠে
চরবে...কে কবে ধানখেতে সবুজ দেখে...
নাকি কোদাল কুড়ূল? পতিত জমি বহাল করতে
চলে আসবে
দামিন-ই-কো-তে।
চাষ দেখলেই দাঁড়িপাল্লা নিয়ে দৌড়ে আসবেন বণিক মানুষ
ওদের ঝামেলায় বিদ্রোহ করতে হবে সাঁওতালমানুষদের
নাকি মানুষ কোনো পথভোলা পথিক...গাছতলায় শুয়ে থাকতে
থাকতে
শালিধানের শিষ দেখে চিড়ে ভেজানোর জল আনতে নেমে পড়বে
নদীতে
মানুষের ঘর চাই। বাধ্য ঝরনা চাই...ছোঁয়া লাগলেই যেন
সাড়া দেয়
কি-বোর্ডে ব্রহ্মান্ড চাই...আকাঙ্খার গাছ চাই...অতএব
এসো হে কর্মেশ্বর! বহাল চরিত্র বদলিয়ে জমিগুলো বাস্তু
করে দাও
তারপর চতুর্ভুজ খোপ গড়ে তুলি
মানুষের জন্য এটুকু না করলে খান্ডবদহন পর্ব বিফলেই গেল
বলতে হবে
পান্ডবের লোকবল ছিল বলছ? দেবতারা খাতির
করত?
ওঁরাই তো এখন ঘুরে বেড়াচ্ছেন অন্য চেহারায়
আকরিক লোহা গলিয়ে ইস্পাতে অরুচি মেটাচ্ছেন না অগ্নিদেব?
বিদ্যুতের জন্য অবশ্য শোনা যায় বিশ্বকর্মাকে ধরনা দিতে
হচ্ছে
বরুণদেবের দফতরে
চোখকানে বৈদ্যুতিন তদারকির অভাবে দেখাশোনায় মরচে পড়ে
গেছে
তাছাড়াও, সিলিকনকুচি দিয়ে
নিকোনো হয়নি মাথার কোটর
তাহলেই বোঝা যাবে এ সমস্তই বেদে লেখা ছিল
বেদ পড়তে কষ্ট হবে? তাহলে, আধুনিক পাঠ ছাড়িয়ে
রামায়ণ মহাভারতকে নিয়ে চলো
বর্তমান বা ভবিষ্যতের খুল্লমখুল্লা পাঠশালায়
জেনে যাবে, মানুষকে ছাদ এবং মেঝে
দিতে হয় কেন
মাটি থেকে জল টেনে আঠারোতলার ছাদে চৌবাচ্চা বানিয়ে দিলে
কী কী হয়
রান্নাঘরে বেসিনে শাওয়ারে নলসাজ পরিয়ে জল এবং যন্ত্রকে
মাটিওপড়ানো মানুষের সংসারে আতিথ্য দিলে কী কী প্রাপ্তি
ঘটে
দেওয়ানেওয়ার বাণিজ্যমন্থনেই কিন্তু লক্ষী ওঠেন
অর্থকে অমৃত বললে বিরক্ত হয় না অভিধান
তত্ত্বের ভাষনে ই-মনোনিবেশ করে বাণিজ্যের তথ্য পেয়ে গেল
কর্মেশ্বর
পুস্তিকা ঘাঁটাঘাঁটি করতে করতে ঘরে ফিরে দেখল
নীলাঞ্জন চিঠি লিখে গেছে;
মাটি বলছে জল নেই, এত নীচে নেমে গেছে
স্তর,সিঁড়ি ভেঙে ওঠা অসম্ভব
পাটিগনিতের কোনো অঙ্কেই খালি চৌবাচ্চায় জল ভরতে পারছে
না পাম্প
মৌসিনরাম গ্রামে যাও কর্মেশ্বর। সহজিয়া মেঘ নিয়ে এসো
ব্রহ্মতালু ফুটো করে জল ভরে দাও। একটাও গাছ নেই
কার সঙ্গে বৃষ্টি খেলবে মেঘ
কংক্রিটের মাচায় বসে মানুষেরা গাছ ভুলে গেছে
ওভেনের চিমনিগুলো শুধু ধোঁয়া ছাড়ছে বাতাসে
কর্মেশ্বর শোনো! কারা যেন বলাবলি করছে
মাটি খুঁড়ে পুঁতে দাও ওকে ওকে ওকে
ভূগর্ভের জলস্তর যদি সামান্য ওপরে উঠে আসে
লোকটার বাঁ-হাতের
সময় খেয়ে ফেলেছে চুলের গোছ, চাঁদ থেকে নী এসেছে চরকাবুড়ি।
চাঁদে গেলে জমি পাওয়া যাবে এখনও, আগুনকোটরের ধারে,গরিবের ঘর...
ভাজা নিমপাতার আলুসেদ্ধ মাখিয়ে এক সানকি
ভাত...বীরপার্টির রাজা
চাঁদ দখল করলে বেড়ে যাবে জমির দাম। এবার সেই লেগে থাকবে
রাজার গায়ে...
গা ঝাড়লেই চাঁদের গুঁড়ো...একটা ঝোলা রাখলে
বড়োমাপের...পিঠ চাপড়িয়ে
জড়িয়ে ধরল ধলা পানতুয়া...চন্দনের ফোঁটাগুলো আবছা...ঘুম
জড়ানো চোখ...
লোকটার ট্যাকে একটা সেলফোন গুঁজে দিয়ে...যেখানেই যাবেন
সকলকে পাবেন...
লোকটার বাঁ-হাতে কোনো আঙুল
আস্তে আস্তে
আস্তে আস্তে গড়িয়ে যাচ্ছে চাকা। চাকার ওপরে ছই। ছইয়ের
মধ্যে আলো।
আলো পড়ছে রানিটির মুখে। হাসি দেখাচ্ছেন তিনি। হাত
নাড়ছেন।
কফিহাউসের ইনফিউসন। চামচ নাড়ছে আঙুল। আঙুলে আংটি।
আংটির গায়ে প্রবাল। শান্ত থাকবে মঙ্গল। রাজজ্যোতিষীর
কাছে মা।
ধারণ করতে হবে গোমেদ। অসবর্ণ বাঁচিয়ে প্রেম।
সিগারেটের হলুদ তোর আঙুলে। তালুতে, ভাগ্যরেখায় রাহুর খোঁচ,
রবিরেখা ভাঙা। খৈনি খাস তুই? লোহালক্কড় পেটাস?
আলো থেকে বেরিয়ে আসছে হাত। হাত বাড়াবি না তুই?
হিড়িম্বা
নতুন বছরের শুরুতে শুঁটকি মেখে পান্তা খেয়ে উঠতে উঠতে
আপনার এত দেরি হয়ে গেল যে জেগে উঠল রোদদূর
শালঘরের ফুটোফাটা সরিয়ে
সে ফুটিফাটা করে দিতে চাইল কাঁকুর।
আপনার কানে বাজল কার পায়ের পাতা পড়ছে শালপাতায়
পাতার বাটিতে কেউ মহুয়া ঢালছে হাঁড়ি থেকে
তেঁতুল ও শালের দানায় সিদ্ধ করেছেন মহুল, সারারাত
সেই বাস পুড়িয়ে রোদদূর কি আপনার আঁচে জ্যোৎস্না হতে
চাইছে
মানুষের গন্ধ মেখে বাস করার জন্য চাইছে তারার ঘামাচি
আপনার আদুল শরীরে বিনবিন ঘামাচি জড়িয়ে বয়ে যাচ্ছে ঘাম
এ গাঁ থেকে ও গাঁ কেউ
জানতেও পারল না
কত তেষ্টায় আপনার
গা থেকে ঘাম নেবার জন্য
আঁজলা পেতে ডাকছেন ভীমসেন হিড়িম্বা
এত ছাই
শরীর থেকে এত ছাই বেরোলো কী করে বুঝতে পারল না নিবারণ !
চুল্লির ভেতর তৎসম বিচ্ছুরণ দেখে ভাবল, এত আলো ছিল তার শরীরে !
তবে কি আলো তীব্র হলে জন্ম নেয় ছাই
নাকি কাজ করছে না দূষন-নিয়ন্ত্রন ! চিমনির ফোকর দিয়ে
নিশ্বাস ফেলছে কয়লা
স্বার্থ পুড়িয়ে গরিব হয়ে গেছে, গরিব না হলে কীভাবে ধনী হয়ে উঠবে সভ্যতা !
এখন আশ্রয় নিয়েছে নিবারণের শরীরে
শরীর কি ধানখেত? একই সঙ্গে দাপিয়ে
বেড়াবে সাপ ব্যাঙ পোকা ও পাখি
গাছ কোমর বেঁধে নিড়োতে নামবে কৃষকের বউ- স্বামী তাকে
গড়িয়ে দেবে মানতাসা
হাঘরে মা-বাপ ভাববে, যে শরীরে এমন ফলন,
সেখানেই সুখে থাকবে মেয়ে
নিবারণের শরীর যদি দখল হয়ে যায় এইভাবে, তবে সে কোথায় রাখবে তার আহ্লাদ !
বিষন্ন অন্ধকারে কীভাবে আতিথ্য পাবে আকাশ ! সে কি নেমে
পড়বে গাছতলায়
মন্দিরের বাইরে, যেখানে দুঃখ মানত
করবে সন্ন্যাসী , ডাল চাইবে এবং রোদদূর, ভাত
এবং জীয়ন্ত সুখ। ছাই না মাখলে যদি সন্ন্যাসী না হতে
পারে আকাশ !
সেকারণেই কি উড়িয়ে দিতে হবে ছাই
সব ছাই মাটিতে ঢেলে দিলে কেমন হয় , হরিশচন্দ্র !
দুব্বো ঠেলে শিশির ধরবে সকাল সন্ধ্যে! বনভোজন করবে
ফড়িং-এর সঙ্গে!
তদ্ভব ছাই জলে ভাসানো কি ঠিক হবে?
একশো একটা হরিণ আসছে শুনে, বাঘগুলো দাড়িয়ে রয়েছে জংগলে, নদীর ধারে ...
কতদূর থেকে আসছে হরিণ, ওদেরও তো জল
দরকার !
ছাইগোলা জল মুখে দিলে ওদের হয়ে যে প্রায়শ্চিত্ত করতে
হবে নিবারণকেই !
প্রায়শ্চিত্ত করলে যদি সাযুজ্যমুক্তি ঘটে যায় !
যদি আর বিদিশার নিশায় শ্রাবস্তীর কারুকার্য না দেখতে
পারে !
যদি আর শালিখ না হতে পারে !
এতদিন কোথায় ছিলেন ...শোনার জন্য কি অপেক্ষা করবেন , বনলতা !
দু তরফা দাখিলা
ভোর হলে মোরগকেই কেন গলা ফাটিয়ে ডাকতে হবে সবার আগে?
অন্ধকারের ভারে কি তার শরীরে জমে উঠেছে নীরবতার মেদ ?
কাঁধ ঝাঁকালেই কি সে প্রিয় হয়ে উঠবে তার মালিকের,
যে তার নখে বেঁধে দেবে ধারালো কাইত... বাজিমাৎ করার
জন্য
কোলে করে নিয়ে যাবে লড়াইয়ের ময়দানে
নাকি তাকে জানান দিতে হবে আমি আছি
আমি আছি আমার চিৎকারে, ঝুঁটিতে,
খুঁটে খাওয়ায়,জীবনের রোদ্দুরে
এ কি তবে রোগমুক্তির কোনো শরীরবিধান, নাকি সেই প্রতিষ্ঠার চাহিদা
যা জোগাড়ের জন্য নিজেকে দেখানো ছাড়া অন্য পথ নেই
নাকি দিনের জলসায় সে গলায় সেধে নিচ্ছে মোরগকল্যাণ
যে রাগিনী লগ্নি করে নিজেই সে পণ্য হয়ে উঠবে ধনপতি
সদাগরের লঘু উদ্যোগে
সারারাত শিরীষের ডাল থেকে সেগুনের ডালে,অশ্বত্থের ডাল থেকে কার্ণিশে কার্ণিশে
উড়ে বেরিয়েছে লক্ষীপেঁচা। কতটা নৈবেদ্য দিলে পেঁচা তার
মালকিনকে
ডেকে আনবে ধনপতির সিন্দুকে? হিসেবের যোগবিয়োগে
অন্ধকারের সংগে ফুরিয়ে গেল জমাখরচের খাতা। একঘন্টা
হাঁটার জন্য
পোশাক পড়তে পড়তে যদি ধনপতির ভাবনায় ফুটে ওঠে
হিসাবশাস্ত্র
যদি তার মনে হয় কতটা ঘাম খরচ করলে শোধ হবে শর্করার ঋণ
ঋণ বাদ গেলে তার হাতে থাকবে কতটা জীবন !
জীবনে সমস্ত লেনদেনই কি দুতরফা দাখিলা করতে হবে খতিয়ানে
?
হিসেব নিকেশ করতে হবে খাতায়? জমায় উদ্বৃত্ত না হলে কি
কেনা যাবে না নক্ষত্রমহল
বাজার
নেহাৎ কপিচাষ দেখাতে আপনাকে আলে দাঁড় করালো হলধর
নাহলে আপনার দেখা হত না, সার সার কী
সুন্দর ফুটে উঠেছে ফুলকপি
ভাবাই হত না তার গালের দুপাশে কী কৌশল ফুল্ল করে সেইসব
পেশি
ডুমো ডুমো হয়ে যেগুলো তাকিয়ে থাকে আপনার জিভে
জানতেও পারতেন না তালবাদ্যে যোগ দিতে কানকোয় হেঁটে আসছে
কইমাছ
বাঁধাকপির পরতে শিল্পচর্চা মাপতে মাপতে
বিভোর হবার সুযোগ পেতেন না আপনি
জানা হত না ওলকপির ডাঁটি কী মন্ত্রে বন্দনা করছে
স্থাপত্য
টেরই পেতেন না, চাহিদা মেটাতে আপনার
স্বাদকুঁড়ি বায়না দিচ্ছে
মাছের মুড়ো ভেটকির কাঁটা কুচোচিংড়ি
বুঝতেই পারতেন না, আপনার ভাবনায় কেন
বিলাস বিছিয়ে রাখে লোভ
মনেই আসে না, শরীরের কোন ঘাম ওলট
পালট করে মাটি
খেত জুড়ে কোন প্রেমে জন্ম নেয় শিল্পের দামাল
আপনার হয়তো জানা ছিল , ভাব ফাটিয়ে
বের হয় অভাব
যার টানে জড়ো হয় জোগান, চাহিদার সঙ্গে
তার যুগলবন্দি
গড়ে তোলে ভোগ ও শ্রমের এক সম্পর্ক
যাকে বাজার নাম দিলেও কিন্তু তত্ত্ব থেকে যায়
অন্ধকার তুলে
নিজেকে ভিতর থেকে বের করলে যদি সাড়া মেলে, যদি কওয়া যায় কিছু কথা
যদি কাতুকাতু দিয়ে, যদি ঘুঁষি মেরে,
খোঁটা উপড়িয়ে যদি
হয়তো খানিক গল্প, কবিতার ভুল পংক্তি,
এমনকী নোংরা জীবন
শ্যাওড়া গাছের নীচে, ডাস্টবিনটির পাশে,
কুকুর ও শিশুর সঙ্গে
বাঘের চোখের সামনে যদি ছায়া ফেলে হাড়গোড়খোলা এক পিন্ড
হৃদয়
কোটরে আটকানো ঘিলু কী কী কথা ভাবতে পারেনি, কী কী লেখা লিখতে চেয়েও
কেবলই ব্যর্থ হয়ে অন্ধকার তোলে, সেঁধিয়ে যাবার জন্য অন্ধকার তুলে
উঠে আসে ফের, মাটি ও কয়লা তুলে ,
হিরে ও প্রবাল তুলে
সূর্যের কাছে যাচ্ছে ব্ল্যাঙ্ক চেক নিয়ে
আলো ও তাপের জন্য অল্প হলেও কিছু মূল্য ধরে দেবে
********************************
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
সমৃদ্ধ হলাম
ReplyDelete