'অ আ এবং অন্যান্য কবিতা
কবি-রাণা বসু
প্রকাশক- বাক্
একজন তরুণ কবিকে অনেক কিছুই পেরিয়ে ধমনীতে আসতে হয়, তাকে দিকভ্রান্ত করার জাহাজ তার আশেপাশে প্রচুর ।একজন তরুণের ক্ষমতার বিচার হয় তিনি কতটা নিজেকে বাঁচিয়ে রাখতে পারলেন এইসবের প্রভাব থেকে আর কতটা নিজের স্বর তৈরি করতে পারলেন । রাণার কাব্যে ঢোকার আগে বলে রাখা ভালো সম্পূর্ণ রাণাকে এখানে পাওয়া যাবে না। কারণ আমার মতে সে আরো কিছুটা এগিয়ে গেছে। বই হাতে নিয়ে কেউ যদি এর প্রথম কবিতাটি পড়ে তাহলে রাণা সম্পর্কে ভুল ধারণা হবার সম্ভাবনা প্রচুর । " সঙ্কোচ ১"
পড়ে কেউ কেউ সঙ্কুচিত হয়ে যাবেন কারণ ওটা ঝুল কবিতা । শেষটা এরকম
" আমি লিপষ্টিক ঠোঁটে রঙচটা আর্তনাদ
এইরকম ভুল বোঝার সম্ভাবনা রাণা আরো চার পাঁচ জায়গায় রেখেছে যে গুলো আমার বিরক্তিকর লেগেছে, বইয়ে এইগুলো থাকার দরকারই ছিল না
আমি তোমার গন্ধেই থাকতে চাই" (টোন)
শুধু দিগন্ত ভাসে। (একটি প্রার্থিত আগুন)
তাহলে ওরাও একা হতে চাইবে (জ্ঞাত)
এইসব আলতো গোছের প্রেম প্রেম কবিতা আর ভালো লাগে না । মাঝে মাঝে কীরকম লোক ঠকানো মনে হয় ।
খারাপ লাগা কবিতা যেমন আছে ভালো লাগাও অনেক লাইন আছো, কবিতাটা হয়ত তেমন কিছু মনে হয়নি কিন্তু দু একটা লাইনে বেশ চমক জাগল , বা নতুনত্ব লাগল এরকম কিছু লাইন
মিসিং লিঙ্কের লেজে পা দিয়ে
তৃতীয় বা চতুর্থ বিশ্বের সাথে
অলস মেজাজে ( সিন্ধু ঘোটক)
বেশ এগিয়ে যাচ্ছিল চাঁদ শব্দটা এসে কবিতা কিছুটা ঘেঁটে দিল। আমার মতে চাঁদ শব্দটা বাংলা কাব্য এত বেশি ব্যবহার করা হয়েছে যে চাঁদ আর নতুন করে কিছু বয়ে আনছে না। চাঁদ কে এড়িয়ে যাওয়াই মঙ্গল ময়। আবার ওই একই সিরিজের ' ভোর' কবিতা শেষটা বেশ। স্মার্ট ।
বাকিটা প্রাইভেট ডিটেকটিভের কাজ " (ভোর)
" রাত থেকে রতি" সিরিজের 'সিন্ধু খোটক'
কবিতাটাই আমার এই সিরিজের বেস্ট লেগেছে।
বইয়ের ১৩ পাতায় এক লাইনের একটা কবিতাবিশ্বাস - বিশ্বাস একটি নিষ্ক্রিয় অঙ্গের নাম " নিস্ক্রিয় অঙ্গ বললেই আমার অ্যপেনডিক্সের কথা মাথায় আসে কারণ মাঝে মাঝেই শুনি অমুক অ্যপেনডিক্সের যন্ত্রনায় ছটপট করছে ।
"বিশ্বাস একটি নিষ্ক্রিয় অঙ্গের নাম"
এটা পড়ার পর আমি চট করে যন্ত্রনায় চলে যাই। এই লাইনটার সবচেয়ে সুন্দর ব্যপার হলো এই লাইন একজন কবিতা না পড়া মানুষের সাথেও কমিনিকেট করতে পারে। এরকমই আর একটা এক লাইনের কবিতা ছিল রাণার , এই বইয়ে নেই যদিও তবুও আমি তুলছি এখানে " ঘড়ি— তিন ফড়িংয়ের অসামাজিক কীর্তিকলাপ"
বইয়ে আরো বেশ কয়েকটা
কবিতা আছে যেগুলো সম্পর্কে
আমাকে সম্পূর্ণ নীরব থাকতে
হচ্ছে কারণ রাণা আমার জিগরী
দোস্ত। সে তার রুজি
রুটির পেছনে যে সময় টুকু
ব্যয় করে তার পরবর্তী
ফাঁকা সময়টার অনেকটা অংশ আমার
সাথে কাটায়। পরীক্ষা
বাঙ্ক করা, নেশা করা, একসাথে
বেড়িয়ে পড়া ইত্যাদি তে সে আমার
সঙ্গী- অর্থাৎ রাণার যাপনের বেশ কিছুটা
জুড়ে আমি আছি । আমাকে
ওইসব কবিতায় নীরব থাকতে
হচ্ছে কারণ ওইসব কবিতার
ভেতরের খেলা, গল্প, গন্ধ,সবটুকুই আমি জানি
তাই এই কবিতা গুলো
আমার কাছে নতুন কোন ব্যঞ্জনা
বয়ে আনে না। হয়ত পাঠকের
ভালো লাগতে পারে
বইয়ের ১৯ পাতার কবিতা
রুমাল , এই কবিতার ভেতরের গল্প , গন্ধ
সবটাই আমি জানি তবুও
একবিতা আমার দারুণ লেগেছে
।এখন আমার মাঝে মাঝেই
মনে হয় সেই কবিতা
গুলোই ভালো কবিতা যার লাইন
গুলোর অর্থ করতে গেলেই
কবিতাটা পুরো ভেঙে পড়ে
অথবা ঠিক মানে করতে
ঠিক ইচ্ছে করে না । রাণার
এই কবিতাটা আসলে এই জাতের
। আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা দিয়ে
এলেখার বিচার চলে না কারণ
এর লাইনগুলো আমাকে ছাড়িয়ে
চলে গেছে।
এগেল আমার ভালো লাগা
খারাপ লাগা। আমার
ভালো লাগা খারাপ লাগার
বাইরেও এইবইয়ে অনেক লেখা
আছে,
সত্যিকথা বলতে ওই লেখাগুলোর
জন্যই পাঠক আপনাকে বইটা
হাতে নিতে হবে কারণ
ভালো লাগা খারাপ লাগা
একধরনের অভ্যাস মাত্র । আর আপনাকে
অভ্যাসের বাইরে নিয়ে এসে আঘাত
করাও কবিতার কাজ ।
(সনৎ মাইতি)
0 comments:
Post a Comment