Wednesday, March 9, 2016
সমসাময়িক ইংরাজি কবিতার অত্যন্ত সুপরিচিত
কণ্ঠস্বর সুদীপ সেন। বিবিসি রেডিও বর্তমান প্রজন্মের ইংরাজি ভাষার গুরুত্বপূর্ণ
কবি হিসেবে অভিহিত করেছে দিল্লী নিবাসী সুদীপকে।‘লুনার ভিসিটেশনস’,‘দালিস টুইস্টেড হ্যান্ডস’, ‘পোস্টমার্কড ইন্ডিয়াঃ নিউ
অ্যান্ড সিলেক্টেড পোয়েমস’ ‘প্রেয়ার ফ্ল্যাগ’, ‘ডিস্ট্রাকটেড জিওগ্রাফিস’, ‘রেইন’,
‘লাদাখ’, ‘ফ্রাকতালস’ তাঁর উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ।‘হারপার কলিন্স বুক অফ ইংলিশ
পোয়েট্রি’র সম্পাদনা করেছেন সুদীপ। ‘আর্ক আর্টস’ এবং ‘অ্যাটলাস’ এর নির্দেশক ও
সম্পাদক তিনি। বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে সুদীপ সেনের কবিতা।২০০৪ সালে স্ট্রুগা পোয়েট্রি
ফেস্টিভ্যালে ‘প্লেয়াদেস সম্মান’ পেয়েছেন তিনি।অনুবাদ গ্রন্থ ‘আরিয়া’র জন্য
পেয়েছেন ‘এ.কে.রামানুজন ট্রান্সলেশন অ্যাওয়ার্ড’। ২০১৩ সালে প্রথম এশীয় হিসেবে অংশগ্রহণ করেছেন নোবেল লরিয়েট উইক-এ ডেরেক ওয়ালকট বক্তৃতামালায়। ‘ইরোটিকার
আঠারোটি বিস্তার’ তাঁর সদ্য প্রকাশিত ‘ইরোটেক্সট’ গ্রন্থটি থেকে অনূদিত।
ইরোটিকার আঠারোটি বিস্তার
সুদীপ সেন
কামনা
মসৃণ, অস্বচ্ছ লিনেনের ভেতর
তোমার স্তনবৃন্তের প্রান্তরেখাগুলি ক্রমশ গাঢ় হয়ে উঠছে আমার জিভের স্পর্শের কথা
ভেবে।
একটি উল্টোনো ‘সি’ এর মত শুয়ে
আছ তুমি। ইচ্ছাকৃত বাঁক, আমার ঠোঁটের উষ্ণতার
অপেক্ষায়। আমার ভেজা ঠোঁট ক্রমশ ঢেকে দেবে তোমার দৃঢ় হয়ে
ওঠা রোমকূপগুলি, জ্বরে পুড়ে যাওয়া ত্বক জুড়ে ভেসে উঠবে কামনার স্বেদবিন্দু,
কল্পনার স্বাদু রস।
অথচ দ্যাখো আমি একবারও স্পর্শ
করিনি তোমাকে। এখন অবধি, একবারও না।
ভারতীয় ডেসার্ট
ভেজা ধোঁয়ার একটি কুণ্ডলী কড়াই
থেকে সোজা উঠে এসে জড়িয়ে ধরল তোমার স্তনদুটি।তুমি তখন দুধ, ক্ষীর আর গাজরের টুকরোর
ওপর ঢেলে দিয়েছিলে অগুনতি মশলা যারা আসলে লুকিয়ে রাখে খিদে আর যৌনতার গোপন রেসিপি।
যখন তুমি গলানো চিনি, মাখন আর
বাদামের কুঁচিগুলো একসাথে নাড়ছিলে তখন আরও বেশি সুগন্ধি ধোঁয়া তোমার সিল্কের শার্ট
ফুঁড়ে ভেতরে ঢুকে পড়ল। উত্তাপে কাঁচের মত স্বচ্ছ হয়ে গিয়েছিল তোমার শার্ট। আর
স্তনবৃন্তের বৃত্তগুলি ,তীক্ষ্ণ চূড়া দুটি স্পর্শ করে, স্বাদু ত্বক আর
কোঁচকান মৃত্তিকার ওপর ধীরে ধীরে নেমে
আসছিল অনাস্বাদিত ক্ষীরের এক আশ্চর্য অনুভূতি।
অনুপস্থিতি
আমাদের তোষকটি আসলে একটি অনন্ত সমুদ্র আর কোঁচকানো চাদরটি তার
ঢেউ। তার ওপর আমরা দুজনে একসাথে ভাসছিলাম।
কিন্তু তোমার দীর্ঘ
অনুপস্থিতিতে, যখন আমাদের নৌকোগুলো অজানা বন্দরে আটকে থাকত,তখন আমাদের বিছানাটা
স্বপ্ন দেখতে শুরু করে দিয়েছিল-
আমি কল্পনা করতাম যে ডকের
পাটাতন তার শরীর থেকে নোঙর খুলে ফেলছে, অভিকর্ষ, স্রোত, বিদ্যুৎতরঙ্গকে অগ্রাহ্য করে,
ঠিক যেভাবে ফোটন কণাগুলি আছড়ে পড়ে আর পুড়ে যায়, যেভাবে একটি তীব্র লোনা উচ্ছ্বাস
বাড়তে বাড়তে মিনার হয়ে ওঠে, একটি বাসনা, সমুদ্রের তলদেশের মত গভীর ও স্থায়ী- তীব্রভাবে
যার ধমনী কাঁপতে থাকে-জল, দেহ আর স্বপ্নরা।
ত্বক
আমাদের ত্বক, রোমকূপগুলি দিয়ে
ভালোবাসা টেনে নিচ্ছিল ভেতরে। গ্রন্থিরা শিহরনগুলিকে স্বাদে পাল্টে নিচ্ছিল।
আকাঙ্খার স্বাদ আসলে একটি দীর্ঘস্থায়ী উষ্ণতা যা দীর্ঘক্ষণ জিভে লেগে থাকে।
নগ্ন শুয়ে থাকা
তোমার উন্মুক্ত পেট আমার মাথার
বালিশ। যখন আমি মাথাটা সরালাম, একটা উষ্ণ হাওয়া উপত্যকা থেকে উঠে এসে আমাকে ঘুম
পাড়াতে শুরু করল ।আর অন্যদিকে তুমি তোমার স্তনদুটি দিয়ে তোমার মুখ আড়াল করে রেখেছিলে। আসলে
এসব কিছুই তুমি করছিলে, আমাকে তোমার
হৃৎপিণ্ডের খাদের কাছে নিয়ে গিয়ে গিলে ফেলার জন্য।
সকাল
গত রাতের আদরে পুড়ে গিয়ে আজ
সকাল থেকে আমি চেষ্টা করছি চামড়ার স্তুপ আর ভারি বাতাসের ভেতর থেকে নিজেকে টেনে
তুলতে।
উত্তরায়ণের আগের দিন
আজ আমরা বিবাহ বন্ধনে নিজেদের
বেঁধে ফেললাম ,কালকের দিনটিকে উদযাপন করার জন্য - আগামীকাল পৃথিবীর দীর্ঘতম দিন।
আমরা আসলে একটি প্রাচীন
সুপারনোভার নক্ষত্রের গুঁড়ো মাত্র যে আমাদের বেঁচে থাকার জন্য ধাতু, রক্ত আর বাতাস
দিয়েছিল।
চুম্বন
একটি অসাড় চুম্বন- সমুদ্রের
মৃদু ঘ্রাণ- নোনা ঠোঁট আর কাঙ্খিত বাতাস-
স্কেচ
পেন্সিলের আঁচড়গুলি ক্রমশ
কালির গাঢ় দাগ হয়ে ওঠে। ঠিক যেমন একজন নারী তার পুরুষটির জন্য উন্মুখ হয়ে ওঠে, আর
ক্ষুদ্র বিষয়গুলিও ক্রমশ জরুরী হয়ে ওঠে। ভ্রূ, কব্জি আর খুব মৃদু একটি ভঙ্গিমা।
ক্লাইম্যাক্স
গোলাপের কুঁড়িটি তার ঠোঁট দুটো মেলে ধরল আসন্ন শিশিরবিন্দুকে শুষে
নেওয়ার জন্য।
স্খলন
পুংকেশরটি তার মাথা উঁচু করে
দাঁড়াল পরাগ রেণু ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য আর আচমকা বৃষ্টির ছাঁট এসে ভিজিয়ে দিল গোলাপি
ত্বকের পুড়ে যাওয়া ভাঁজগুলি।
আকাঙ্খা
বৃষ্টির শেষ বিন্দুটি ওর নাভি
খাদের কাছে এসে থমকে দাঁড়ালো । ভ্রু-পল্লবের ওপর থমকে দাঁড়ালো শেষ স্বেদবিন্দুটি।
আমার দীর্ঘ চুম্বনের ভেজা দাগ আঁকড়ে ধরল ওর ত্বক- সবাই চাইছে আরো, আরো,আরো বেশি কিছু।
আরো বেশি ভিজে যাওয়া, আরো
বৃষ্টি, আগুন, আকাঙ্খা, বাষ্পকণা- আর স্ফটিক জলের ঠাণ্ডা স্পর্শ, তৃষ্ণা, লালা,
অপেক্ষা আর বৃষ্টি।
জোড়
একে অন্যকে আঁকড়ে ধরে শুয়ে
ছিলাম আমরা। তীব্র আঠার জোড়। ঠিক যেভাবে একটি দ্বিধাগ্রস্থ দিগন্তরেখায় আটকে থাকে
আকাশ আর পৃথিবী। আমরা ওভাবেই ছিলাম একসাথে, অনির্ণীত একটি বিশ্বাসের ডানায় ভর করে।
রবিবারের ব্রেকফাস্টের পর
তোমার অর্ধেক জেগে ওঠা
সকালবেলার শরীরের ঘ্রাণ রোমকূপের ছিদ্রগুলি দিয়ে বাইরে বেরিয়ে এসে নতুন একটি
লুকোনোর জায়গা খুঁজছে আর লিনেনের টেবিল ক্লথের সেলাই, দুধ আর ফলের রসের গ্লাস
ডিঙ্গিয়ে খুব দ্রুত ছুটে আসছে আমার দিকে।
ফেরোমেন আমাকে মাতাল করে
দিচ্ছে। আমি কাঁপতে কাঁপতে সূর্যের মৃদু আলোর দিকে ভেসে যাচ্ছি। তোমার কুয়াশা
জড়ানো শরীর- উষ্ণ চামড়া যা আবার জ্যান্ত হয়ে উঠছে, রক্ত ফুটছে- আবার একটি
পুনর্জন্ম, ঠিক যেভাবে গতরাতের ফেলে দেওয়া ক্রোসান্টের টুকরোগুলো ওভেনের আঁচে আবার
স্বাদু, মুচমুচে হয়ে ওঠে।
অপেক্ষা
গ্রীষ্মের মৃত রোদ- একটি
আর্দ্রতা মেঘগুলিকে বৃষ্টির জন্য আরো গাঢ় করে তুলছে -থম মেরে থাকা চরাচর- প্রতিটি
সুঠাম, সম্পূর্ণ হয়ে ওঠা পাতা কাঁপতে কাঁপতে তাদের শরীরে জলকণার প্রথম স্পর্শের
অপেক্ষা করছে।
নীল
নিকারাগুয়ার আকাশের সবটুকু গাঢ়
নীল শুষে নিচ্ছে একটি তুঁতে রঞ্জক- তোমার পোশাকের নীল, তোমার হেয়ার ব্যান্ডের নীল,
তোমার স্যান্ডেলের চামড়ার হালকা নীল রঙ, দ্রুত পাল্টে যাওয়া লেকের ত্বক, আর সেই
পুরনো আংটিটার ইজিপ্সিয়ান নীলকান্ত মণির গাঢ়
নীল রঙ যেটা তুমি কদিন আগেই তোমার বিবাহিত অনামিকায় পরেছিলে।
এত নীল রঙ দেখলে মানুষ খুশিতে অন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু কখনো
রঙ এইসব উচাটনগুলিকেও মিথ্যে করে তোলে-একটা প্রশান্তি যা শব্দের ভেতরের স্তব্ধতাকে
আলোড়িত করে, বাঁকা শেরিফে লেখা আরবিক বর্ণমালা, ডানদিক থেকে বাঁদিকে সরে যাওয়া
হাতের লেখা, তোমার নাকছাবি থেকে ঠিকরে পড়ছে লুকানো শব্দগুলির উচ্ছ্বাস। অপরূপ
কয়েকটি লাইন, ঠোঁট ছুঁয়ে যাওয়া, চুম্বনের স্ফটিক স্পর্শ, ধোঁয়ার দাগ লাগা অস্ফুট
কয়েকটি লাইন যারা দুটি ভিন্ন মেরুর গাঢ় প্রেমকে লুকিয়ে রাখতে পারছে না।
স্তব্ধতা
স্তব্ধতার নিজস্ব একটি রঙ
আছে।প্রতিটি শ্বাসাঘাতের পর একটা উত্তাপ আবার জাগিয়ে তোলে ঘুমিয়ে পড়া লালা, জিভ আর
অস্ফুট স্বরগুলিকে।
এখানে ওখানে একা কয়েকটি মেঘ
বৃষ্টির অপেক্ষা করছে। আদরের ইচ্ছেতে স্তব্ধতাও গলতে গলতে শব্দ হয়ে ওঠে। পৃথিবীর
সবকটি রঙ তখন রক্তবর্ণ হয়ে ওঠে। আর তোমার
ঠোঁটদুটো নিঃশব্দে তোমার স্তব্ধতার কথা বলে যায়।
তোমার চিকনের কাজ করা শাদা
প্রায় স্বচ্ছ ব্লাউজ কোনমতেই লুকোতে পারছে না উষ্ণ গম-জলপাই রঙের চামড়ার ওপর ফুটে ওঠা তোমার হৃৎস্পন্দন।
তোমার চুলের দুধ শাদা ফুলটির
একটি পাপড়ি খসে পড়ল।
শুধুমাত্র একটি পাপড়ি। ঐ পাপড়িটিতে স্তব্ধতার রঙ ফুটে উঠল- শাদা, স্বচ্ছ শাদা-
সম্পূর্ণ শাদা রঙের স্তব্ধতা।
বৃষ্টি
এসপ্রেসোর তলানিটুকু ইচ্ছে
করেই একটি ধীরগতিতে আমার কাঁচের কফি মগের নীচে এসে পড়ল। আর আমার মাথার ভেতর তখন
ঢুকে পড়েছে সকালবেলার কাঁচা-সবুজ বৃষ্টির ঘ্রাণ, সুগন্ধি বাষ্পের জড়িয়ে থাকা
ঘূর্ণিগুলি।
আজ খুব মেঘলা একটি দিন। গাঢ়,
ধূসর, যে কোন মুহূর্তে বৃষ্টি হতে পারে। খুব নীচে নেমে এসেছে নুয়ে পড়া, গাভীন মেঘগুলি-
জলকণার অযুত প্রিজম-মাত্র কয়েকটি মুহূর্তের বিরতি।
আশেপাশে সবকিছু শুকনো। তবুও
সোঁদা বাতাসের সংকেত আমাকে বারবার অপেক্ষা করতে বলছে - সম্ভাবনাময় একটি অপেক্ষা,
কখন আকাশ ভেঙ্গে নেমে আসবে সব উত্তাপ।
কিন্তু বৃষ্টির কল্পনা,
সত্যিকারের অন্তহীন বৃষ্টির থেকে অনেক বেশি ভালো। অন্তত কল্পনায় আমরা বৃষ্টি, ঝড়,
বাতাসকে নিয়ন্ত্রন করতে পারি- ভেবে নিতে পারি বৃষ্টির আকাঙ্খা, অর্থ আর অভিমুখ।
ভাষান্তরঃ শৌভিক দে সরকার
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
0 comments:
Post a Comment