(পরিচালক বাক্)
Saturday, March 12, 2016
পাঠক, আপনি কি জিলিপি প্রস্তুতি এবং কবিতার নির্মাণকে একই মনে করেন? ঠোঙা ধরে কবিতা পড়তে ... থুড়ি ...
খেতে অভ্যস্ত? আমার
কিন্তু কোনো অভিযোগ নেই আপনার প্রতি। কেউ যদি পাখির ডাক আর রবিশংকরের সেতার শুনে
একই প্রতিক্রিয়া দেন- ‘বাঃ! কী ভালো লাগছে গো শুনতে!’... আমাদের আর কী বলার থাকতে
পারে? বাজনা তিনি সগর্বেই বোঝেন না, কিন্তু তিনিও একজন ‘শ্রোতা’ অবশ্যই। তাঁর
কানের সুখ হোক। শ্রুতিকটূ আওয়াজগুলো বরং সরিয়ে নিই আমরা তাঁর চৌহদ্দি থেকে।
প্রাণ
টের পাওয়াটা স্বয়ং প্রাণের উপরে নির্ভরশীল নয়। গাছের যে প্রাণ আছে সেটা বুঝেছে
মানুষ সভ্যতার প্রায় শেষপ্রান্তে এসে। অথচ আমাদের পৌরাণিক মানুষরা জানতেন পাথরেরও
প্রাণ আছে। সেটা জানার জন্য সাধনার স্তরের
পর স্তর থাকে। কী জানেন, কবির চেয়ে পাঠকের নিজেকে
প্রস্তুত করার দায় থাকে ঢের বেশি। ফুল নিজের নিয়মে ফোটে। সেটা যে সপ্রাণ ফোটা,
সেটা বুঝতে কজন পারে? ফুলও তো এক সপ্রাণ
দেবতা। ভাইরাসের মধ্যে জড় আর জীব উভয়ের লক্ষণ আছে। প্রাণ কাকে বলে? হওয়া আর হয়ে থাকার মধ্যে কবিতার প্রাণ রয়ে যায়, পাঠকের
বন্ধ আর আধখোলা চোখের সামনে।
এবং
অবশ্যই কবিকেও প্রস্তুত হতে হয়। কবিতার জন্ম দেন তিনি। কিন্তু কাকে বলবেন কবির
প্রস্তুতি? কবি কি ক্রিকেটার নাকি যে নেট খাটিয়ে প্র্যাকটিস করবেন,
ম্যাচ খেলার আগে? নাকি মোটর মেকানিক হওয়ার আগে
কোনো ওস্তাদের গ্যারাজে কালিঝুলি মাখবেন, তারপর হাত দেবেন
কোনো বি এম ডাব্লিউতে? নাকি কোনো স্পেশালিস্ট ডাক্তারবাবুর
পাশে বসে থেকে হাতুড়েগিরি শিখবেন, তারপর কব্জি ডোবাবেন পোয়াতির পেটে?
এরকম প্রস্তুতিও
হয় বৈকি। অবশ্যই হয়। ক্লোন কোবিতার দেখা এভাবেই মেলে। একটা কোবিতায় কোবির নাম লেখা
না থাকলে আপনার সেটা জয় গোস্বামীর মনে হচ্ছে, অথচ হয়ত তা
লিখেছেন কোনো ৯০ দশকের কোবি; স্বপন রায়ের মনে হচ্ছে, কিন্তু সেটার লেখক হয়ত শূন্য দশকের ‘অন্যধারার’ কোবি; অমিতাভ মৈত্রর মনে হচ্ছে... লিখেছেন হয়ত ‘অন্যরকম’ কোবিতা লেখার খ্যাতি
পেতে উন্মুখ প্রথম দশকের কোনো কোবি। এরকম আমরা আকছার দেখেছি। এঁরা সকলেই
শিক্ষানবিশ, কিন্তু নামতে চাইছেন ওস্তাদের ভূমিকায়। যে লেখা
নিজের ডায়েরিতে লুকিয়ে রাখার কথা, প্রকাশ্যে বুক ফুলিয়ে
ছাপছেন, কবি হিসেবে পতাকা তুলছেন। প্রস্তুতিটা যে লুকিয়ে
রাখতে হয়, এঁরা মানেন না। কিন্তু সটান স্থান পেয়ে যান ‘বহুল প্রচারিত’ ছোট পত্রিকাগুলিতে। এঁরা সেটা পান।
আর ‘বানিজ্যিক’ পত্রিকা? হ্যাঁ, যেখানে
সমসাময়িক কোবির স্থান আছে, কিন্তু সমসাময়িক কবিতা সেখানে
নির্বাসিত।
কিছুদিন
আগে এক অনলাইন পত্রিকায় আমার এক প্রিয় বন্ধুর কোবিতা দেখে চমকে উঠলাম ... আরে, এ তো আজ অমিতাভ মৈত্রর নকলস্য নকল কোবিতা লিখে বসে আছে! এটাও কি কবির
প্রস্তুতির সঙ্গে যুক্ত প্রসঙ্গ? সম্ভবত না। এটা একজন প্রস্তুতিহীন
কবির প্রসঙ্গ। সে নিজেকে যেনতেনপ্রকারেণ কবি হিসেবে প্রেজেন্ট করতে বদ্ধপরিকর,
কিন্তু গোড়ায় গলদ রয়ে গেছে। নিজেকে যথেষ্ট অবকাশ দিয়ে সে তৈরি
করেনি। এবং সে আদৌ প্রভাবিত নয়। সে সোজা নকলটাই লিখছে, কোবিতা লিখছে, খাঁচার পাখি
যেমন বুলি আওড়ায় কিন্তু নিজের গলার গভীরে ডুব দেয় না। হাততালি পেলেই এমন কোবি
অমরত্বের আশ্বাস পায়। আর কায়দা জানলে হাততালি পাওয়াটা আজকাল লাথি খাওয়ার চেয়ে ঢের
সোজা ব্যাপার। সেটার জন্য কোবি হওয়ার কোনো কারন নেই।
এখানে
এটাও বলে রাখি, সব কবিই কিন্তু প্রভাবিত। যার মধ্যে প্রভাব
নেই, তিনি কবি নন, কারন তাঁর মধ্যে একটা
ভাষার উত্তরাধিকারই নেই। তিনি জারজ। কিন্তু প্রভাবিত হওয়া, আর
কাউকে নকল করে কবিতা লেখা এক বস্তু নয়। প্রভাব একটা আবহাওয়ার নাম। নকলনবিশি হল
ইঞ্জেক্টেড হয়ে কবিতা লেখা, যখন একটা কোবিতা পড়ে সরাসরি আরেকজন কবিকে মনে পড়ে
যাচ্ছে, চালাকিটা ধরা যাচ্ছে, ঘেন্না হচ্ছে ... ড্রাগ নিয়ে খেলতে নামার মতো। এই নকলনবিশি
এক সময় অবশ্যই কোবিতাকে একটা মৃত সাংস্কৃতিক সামগ্রী করে তোলে, কোবি আর পাড়ার শখের তবলচিটিকে একই মনে হয়।
অবিশ্যি
তবলা বাজানোও একটা দুর্দান্ত ব্যাপার। তেমন উন্মাদনায় বাজাতে পারলে, তৈরি হাতে
তবলা তো কবিতাই বাজায়, তাই না? কোবিতা নয়।
অনুপম মুখোপাধ্যায়
(পরিচালক বাক্)
(পরিচালক বাক্)
'অ আ এবং অন্যান্য কবিতা
কবি-রাণা বসু
প্রকাশক- বাক্
একজন তরুণ কবিকে অনেক কিছুই পেরিয়ে ধমনীতে আসতে হয়, তাকে দিকভ্রান্ত করার জাহাজ তার আশেপাশে প্রচুর ।একজন তরুণের ক্ষমতার বিচার হয় তিনি কতটা নিজেকে বাঁচিয়ে রাখতে পারলেন এইসবের প্রভাব থেকে আর কতটা নিজের স্বর তৈরি করতে পারলেন । রাণার কাব্যে ঢোকার আগে বলে রাখা ভালো সম্পূর্ণ রাণাকে এখানে পাওয়া যাবে না। কারণ আমার মতে সে আরো কিছুটা এগিয়ে গেছে। বই হাতে নিয়ে কেউ যদি এর প্রথম কবিতাটি পড়ে তাহলে রাণা সম্পর্কে ভুল ধারণা হবার সম্ভাবনা প্রচুর । " সঙ্কোচ ১" পড়ে কেউ কেউ সঙ্কুচিত হয়ে যাবেন কারণ ওটা ঝুল কবিতা । শেষটা এরকম
কবি-রাণা বসু
প্রকাশক- বাক্
একজন তরুণ কবিকে অনেক কিছুই পেরিয়ে ধমনীতে আসতে হয়, তাকে দিকভ্রান্ত করার জাহাজ তার আশেপাশে প্রচুর ।একজন তরুণের ক্ষমতার বিচার হয় তিনি কতটা নিজেকে বাঁচিয়ে রাখতে পারলেন এইসবের প্রভাব থেকে আর কতটা নিজের স্বর তৈরি করতে পারলেন । রাণার কাব্যে ঢোকার আগে বলে রাখা ভালো সম্পূর্ণ রাণাকে এখানে পাওয়া যাবে না। কারণ আমার মতে সে আরো কিছুটা এগিয়ে গেছে। বই হাতে নিয়ে কেউ যদি এর প্রথম কবিতাটি পড়ে তাহলে রাণা সম্পর্কে ভুল ধারণা হবার সম্ভাবনা প্রচুর । " সঙ্কোচ ১" পড়ে কেউ কেউ সঙ্কুচিত হয়ে যাবেন কারণ ওটা ঝুল কবিতা । শেষটা এরকম
" আমি লিপষ্টিক ঠোঁটে রঙচটা আর্তনাদ
বসাবই সময়মত
তুমি যেন সঙ্কোচ করো না"
এইরকম ভুল বোঝার সম্ভাবনা রাণা আরো চার পাঁচ জায়গায় রেখেছে যে গুলো আমার বিরক্তিকর লেগেছে, বইয়ে এইগুলো থাকার দরকারই ছিল না
" একটুকরো লেবু কেটে দিও
ভাত খাবার পর
বিছানা পর্যন্ত
আমি তোমার গন্ধেই থাকতে চাই" (টোন)
"প্রতিটা দিনের মত
আগে পরে
সে আষ্টেপৃষ্টে বাঁধা
তার সোনালী ছটায়
শুধু দিগন্ত ভাসে। (একটি প্রার্থিত আগুন)
কাউকে বলো না তুমি একা
তাহলে ওরাও একা হতে চাইবে (জ্ঞাত)
এইসব আলতো গোছের প্রেম প্রেম কবিতা আর ভালো লাগে না । মাঝে মাঝে কীরকম লোক ঠকানো মনে হয় ।
খারাপ লাগা কবিতা যেমন আছে ভালো লাগাও অনেক লাইন আছো, কবিতাটা হয়ত তেমন কিছু মনে হয়নি কিন্তু দু একটা লাইনে বেশ চমক জাগল , বা নতুনত্ব লাগল এরকম কিছু লাইন
মিসিং লিঙ্কের লেজে পা দিয়ে
আমি দু জন্ম পিছিয়ে যাই
তৃতীয় বা চতুর্থ বিশ্বের সাথে
যোগাযোগ রাখি
চাঁদ টপকে যাই
অলস মেজাজে ( সিন্ধু ঘোটক)
বেশ এগিয়ে যাচ্ছিল চাঁদ শব্দটা এসে কবিতা কিছুটা ঘেঁটে দিল। আমার মতে চাঁদ শব্দটা বাংলা কাব্য এত বেশি ব্যবহার করা হয়েছে যে চাঁদ আর নতুন করে কিছু বয়ে আনছে না। চাঁদ কে এড়িয়ে যাওয়াই মঙ্গল ময়। আবার ওই একই সিরিজের ' ভোর' কবিতা শেষটা বেশ। স্মার্ট ।
" লিংক ধরে এসে এগোলে
সামনে এসে পড়ে আত্মহত্যা
বাকিটা প্রাইভেট ডিটেকটিভের কাজ " (ভোর)
" রাত থেকে রতি" সিরিজের 'সিন্ধু খোটক'
কবিতাটাই আমার এই সিরিজের বেস্ট লেগেছে।
বইয়ের ১৩ পাতায় এক লাইনের একটা কবিতাবিশ্বাস - বিশ্বাস একটি নিষ্ক্রিয় অঙ্গের নাম " নিস্ক্রিয় অঙ্গ বললেই আমার অ্যপেনডিক্সের কথা মাথায় আসে কারণ মাঝে মাঝেই শুনি অমুক অ্যপেনডিক্সের যন্ত্রনায় ছটপট করছে ।
"বিশ্বাস একটি নিষ্ক্রিয় অঙ্গের নাম"
এটা পড়ার পর আমি চট করে যন্ত্রনায় চলে যাই। এই লাইনটার সবচেয়ে সুন্দর ব্যপার হলো এই লাইন একজন কবিতা না পড়া মানুষের সাথেও কমিনিকেট করতে পারে। এরকমই আর একটা এক লাইনের কবিতা ছিল রাণার , এই বইয়ে নেই যদিও তবুও আমি তুলছি এখানে " ঘড়ি— তিন ফড়িংয়ের অসামাজিক কীর্তিকলাপ"
বইয়ে আরো বেশ কয়েকটা
কবিতা আছে যেগুলো সম্পর্কে
আমাকে সম্পূর্ণ নীরব থাকতে
হচ্ছে কারণ রাণা আমার জিগরী
দোস্ত। সে তার রুজি
রুটির পেছনে যে সময় টুকু
ব্যয় করে তার পরবর্তী
ফাঁকা সময়টার অনেকটা অংশ আমার
সাথে কাটায়। পরীক্ষা
বাঙ্ক করা, নেশা করা, একসাথে
বেড়িয়ে পড়া ইত্যাদি তে সে আমার
সঙ্গী- অর্থাৎ রাণার যাপনের বেশ কিছুটা
জুড়ে আমি আছি । আমাকে
ওইসব কবিতায় নীরব থাকতে
হচ্ছে কারণ ওইসব কবিতার
ভেতরের খেলা, গল্প, গন্ধ,সবটুকুই আমি জানি
তাই এই কবিতা গুলো
আমার কাছে নতুন কোন ব্যঞ্জনা
বয়ে আনে না। হয়ত পাঠকের
ভালো লাগতে পারে
বইয়ের ১৯ পাতার কবিতা
রুমাল , এই কবিতার ভেতরের গল্প , গন্ধ
সবটাই আমি জানি তবুও
একবিতা আমার দারুণ লেগেছে
।এখন আমার মাঝে মাঝেই
মনে হয় সেই কবিতা
গুলোই ভালো কবিতা যার লাইন
গুলোর অর্থ করতে গেলেই
কবিতাটা পুরো ভেঙে পড়ে
অথবা ঠিক মানে করতে
ঠিক ইচ্ছে করে না । রাণার
এই কবিতাটা আসলে এই জাতের
। আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা দিয়ে
এলেখার বিচার চলে না কারণ
এর লাইনগুলো আমাকে ছাড়িয়ে
চলে গেছে।
এগেল আমার ভালো লাগা
খারাপ লাগা। আমার
ভালো লাগা খারাপ লাগার
বাইরেও এইবইয়ে অনেক লেখা
আছে,
সত্যিকথা বলতে ওই লেখাগুলোর
জন্যই পাঠক আপনাকে বইটা
হাতে নিতে হবে কারণ
ভালো লাগা খারাপ লাগা
একধরনের অভ্যাস মাত্র । আর আপনাকে
অভ্যাসের বাইরে নিয়ে এসে আঘাত
করাও কবিতার কাজ ।
(সনৎ মাইতি)
(সনৎ মাইতি)
Friday, March 11, 2016
একশো বছরের নিঃসঙ্গতা
গোটা একটা শতক নিজেকে শেষ করে ফেলছে
হেনরিকে শুদ্ধ আর সূক্ষ্ণ করে তুলবে বলে
আর ভয় ধরানো অবিশ্বাসে হেনরি
অনুপস্থিত একটা রুমালে একমনে এমব্রয়ডারি করে যাচ্ছে
গোটা সেই শতককে
তার মতো সূক্ষ্ণ আর পরিশুদ্ধ করার জন্য
নেমেসিস ও হেনরি
চামচ ফেলে দেবার শব্দে হেনরি বোঝে
সে বাতিদানের নিভে যাবার জন্য দাঁড়িয়ে
ভয় পেয়েই সে আরো জোরে কাচ মুছতে শুরু করে দেয়
আর চামচটাকে ছুঁড়ে দেয় চুল্লির মধ্যে
আর বাতাসকে এমন ভয় দেখায়
যাতে বাতিদানের কাছে কিছুতেই আরে যেতে পারে না সে
হেনরি ও নেলসন
একজন নারী হিসেবে এটা বোঝা কঠিন নয় যে
যে-কোনো জাহাজের কাছেই হেনরি বিপজ্জনক।
তবু ওকেই আমি নৌযুদ্ধের দিনগুলোয় চাই-
এমনকি রবিবারেও।
ওর ডিমে ঠাসা ঝুড়ি যাতে ও আমাকে দিয়ে দিতে বাধ্য হয়
চিরকালের মতো।